
Sharing is caring!
ভেতো বাঙ্গালির দেশে অন্তর্জাল বা ইন্টারনেট শুরুর দিকে ছিল বড়লোকেদের বিলাসিতার দ্রব্য। এরপর কেটে গেছে অনেকটা সময়। ইন্টারনেট এখন বনেদি ব্যবসায়ী থেকে পাড়ার মুদির দোকানদার পর্যন্ত ছড়িয়ে গেছে। তবে বাঙ্গালির ইন্টারনেট সম্পর্কে ধারণা কিন্তু পাল্টায়নি। অন্তর্জালের ব্যাপারটা এখনো অধিকাংশের কাছে নিখাদ বিনোদনের মাধ্যম, আর কিছুই নয়। যে ছেলেটা ফেসবুকের মাধ্যমেই আয় করে, হাতখরচটা ফেসবুকই এনে দেয়- তাকে তার মা হয়তো এখনো বলেন,
“কি করিস সারাদিন ফেসবুকে? সুন্দরী মেয়েদের ছবি দেখিস খালি? আজ খবর আছে তোর। উনি খালি আসুক আগে অফিস থেকে!”
থাক সে সব কথা। ফ্রিল্যান্সিং নামটা শুনে হয়তো অনেকেই চোখ কপালে তুলে ভাবছেন, এসব তো প্রোগ্রামার, কম্পিউটার এক্সপার্টের কাজ। এসব জেনে আমাদের কি লাভ? শুনে অবাক হবেন, ফ্রিল্যান্সিং ব্যাপারটার সাথে সেসবের তেমন সম্পর্কই নেই! হ্যাঁ, অনলাইন ফ্রিল্যান্সিং ব্যাপারটায় এক্সপার্ট হতে হলে কম্পিউটার না্মক যন্ত্রটির সাথে ভালোই খাতির থাকা লাগে, কিন্তু তার মানে এই নয় যে সিএসই থেকে ডিগ্রি থাকা লাগবে ফ্রিল্যান্সিং এর জন্যে। ঘরে বসেই অনলাইন ফ্রিল্যান্সিং বা আউটসোর্সিং শেখা সম্ভব। ব্যাপারটা খোলাসা করে বলা যাক।
ফ্রিল্যান্সিং প্রথম শুরু হয়েছিলো ১৯৯৮ সালের দিকে। অনলাইনে একটা মার্কেটপ্লেস খোলা হয়েছিলো, সেখান থেকেই বলতে গেলে ফ্রিল্যান্সিংয়ের শুরু। ব্যাপারটা বেশ মজাদার। ধরাবাধা অফিস টাইম নেই, যখন ইচ্ছে কাজ করলেই হলো! এই কাজ হতে পারে বিভিন্ন রকম। ওয়েব ডিজাইনিং থেকে শুরু করে গ্রাফিক ডিজাইনিং, সফটওয়্যার ডেভেলপমেন্ট, বিষয়ভিত্তিক আর্টিকেল লেখা বা ডাটা এন্ট্রি হতে পারে ফ্রিল্যান্সিংয়ের বিষয়।
এখানে দুই পক্ষ থাকেন। ক্লায়েন্ট আর ফ্রিল্যান্সার। ক্লায়েন্ট ফ্রিল্যান্সারকে বিভিন্ন কাজ দিয়ে থাকেন, আর একটা নির্দিষ্ট সময়ের (যেটি ফ্রিল্যান্সারের ইচ্ছেমতো নির্ধারণ করা হয়) মধ্যে কাজ শেষ করে ক্লায়েন্টকে পাঠিয়ে দিতে হয়। ক্লায়েন্টের সাথে কাজ শুরুর আগেই চুক্তি করা হয় পারিশ্রমিক নিয়ে। কাজ হয়ে গেলে, ক্লায়েন্ট ফ্রিল্যান্সারকে তার প্রাপ্য বুঝিয়ে দেয়। ব্যস, হয়ে গেল একটি সফল ফ্রিল্যান্সিং!
প্রথমে আপনি যে বিষয়টি নিয়ে ফ্রিল্যান্সিং করতে চান, সে বিষয়ে ছোটখাটো একজন বিশেষজ্ঞ হয়ে যেতে হবে আপনাকে। আপনি যদি কয়েকটি বিষয়ে দক্ষ হন, তাহলে ফ্রিল্যান্সার হিসেবে বেশি কাজ পাবেন। এখানে বেশিরভাগ ক্লায়েন্টই অবাঙ্গালী হয়ে থাকেন। তাই তাদের সাথে যোগাযোগের জন্যে ইংরেজি ভাষাটা বেশ ভালোভাবে রপ্ত করতে হবে। তাছাড়া বিভিন্ন কাজ করে অভিজ্ঞতা অর্জন করতে হবে। মনে রাখতে হবে, যতো অভিজ্ঞতা, কাজ পাবার সম্ভাবনা ততো বেশি।
এতক্ষণে অনেকের মনেই হয়তো প্রশ্ন জাগছে, ‘”সবই বুঝলাম, কিন্তু এই ক্লায়েন্ট-ফ্রিল্যান্সার লেনদেনের ব্যাপারটা হবে কোথায়?” এই ‘ব্যাপারটা’ হবে মার্কেটপ্লেসে। না, এটি কিন্তু কাঁচাবাজার কিংবা পাইকারি বাজার নয়। এটি সম্পুর্নই অনলাইন নির্ভর একটি মার্কেট যার মাধ্যমে ক্লায়েন্টরা খুঁজে পান ফ্রিল্যান্সারদের। মার্কেটপ্লেসে পুরো ব্যাপারটা ঘটে সুসংগঠিত একটা প্রক্রিয়ার মাধ্যমে।
প্রথমে ক্লায়েন্ট বা ক্লায়েন্টরা মার্কেটপ্লেসে আসেন। সেখানে তারা ফ্রিল্যান্সারদের করা বিভিন্ন বিড পর্যালোচনা করে দেখেন। একজন ফ্রিল্যান্সার তার করা বিডে বলে দেয় যে সে কাজটি কত সময়ের মধ্যে করে দিতে পারবে আর কতো পারিশ্রমিক লাগবে। ক্লায়েন্ট তারপর সব বিড থেকে যেটিকে সবচেয়ে যোগ্য মনে করবেন, সেটিই গ্রহণ করবেন। তারপর ফ্রিল্যান্সারদের সাথে যোগাযোগ করে ক্লায়েন্ট কাজের ব্যাপারে সবকিছু সম্পন্ন করেন। কাজ শেষ হয়ে গেলে বিভিন্ন উপায়ে অর্থ পরিশোধ করে দেয়া হয়।
শুধু ফ্রিল্যান্সার হলেই কিন্তু চলবে না। আপনি ফ্রিল্যান্সার হলেন, কিন্তু কোন ক্লায়েন্ট আপনাকে কাজ দিচ্ছে না- এমনটা হলে ফ্রিল্যান্সিং আপনার জন্যে না। ভালো ফ্রিল্যান্সার হতে হলে আপনাকে বেশকিছু বিষয় খেয়াল রাখতে হবে। যেমন, মার্কেটপ্লেসে আপনি যখন বিড করবেন, তখন ক্লায়েন্ট আকৃষ্ট হবে আপনার প্রোফাইল দেখে। সেজন্যে প্রোফাইল হতে হবে চমৎকার, যাতে ক্লায়েন্ট দেখেই আগ্রহ প্রকাশ করে কাজ দিতে। বিভিন্ন মার্কেটপ্লেস ঘুরে, সেখানে ক্লায়েন্টদের চাহিদা বুঝে প্রোফাইল তৈরি করা উচিৎ।
দারুণ একটা প্রোফাইল বানাতে হলে কয়েকটা বিষয় মাথায় রাখতে হবে। যেমনঃ
১। যেকোন একটা বিষয়ে এক্সপার্ট হতে হবে। বাংলাদেশে আউটসোর্সিং কোচিং সেন্টার আছে, সেখান থেকে এ বিষয়ে শেখা যায়। তাছাড়া নিজে নিজে হাতে কলমে চেষ্টা করাটা খুবই দরকারি। ভিডিও টিউটোরিয়াল দেখেও অভিজ্ঞ হবার পথে এগিয়ে যাওয়া যায়।
২। আপনি যে বিষয়ে এক্সপার্ট হয়েছেন, সে বিষয়টি নিয়ে দুই একটা কাজ করে রাখতে হবে। যেমন, আপনি যদি লেখালেখিতে ভালো হন, তাহলে আপনার লেখা কোন একটা আর্টিকেল প্রোফাইলে যোগ করে দিতে হবে।
৩। oDesk.com, Freelancer.com এর মতো জনপ্রিয় মার্কেটপ্লেসে ফ্রিল্যান্সিং স্কিল মেজারমেন্ট নামে একটা পরীক্ষা দেয়া যায়। এগুলোতে অংশগ্রহণ করলে সেটি প্রোফাইলের জন্যে মন্দ হবে না কিন্ত!
৪। ফ্রিল্যান্সিং মার্কেটপ্লেস ছাড়াও আপনার প্রোফাইল আর নৈপুন্য বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম, ব্লগ আর ফোরামে শেয়ার করতে পারেন। এতে প্রোফাইলের পরিচিতি বাড়বে, ফ্রিল্যান্সিংয়ে যা বেশ গুরুত্বপূর্ণ।
ক্লায়েন্ট পাবার সবচেয়ে সহজ উপায় হলো কারো রেফারেন্সে কাজ পাওয়া। চমৎকার একটা প্রোফাইল প্রস্তুত করে ধৈর্য ধরে অপেক্ষা করে থাকতে হবে প্রথম কাজ পাবার জন্যে। এখানেই ধৈর্যের আসল পরীক্ষা শুরু। অনেক অপেক্ষার পর একটা কাজ হাতে পেলে সেটা নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে নিখুতভাবে শেষ করতে হবে। এতে ক্লায়েন্ট খুশি হয়ে হয়তো পরের কাজটিও আপনাকে দিয়ে দেবে, কিংবা অন্যের কাছে রেফারেন্স করবে আপনার নাম। এভাবেই ফ্রিল্যান্স জগতে আপনি হতে পারবেন পরিচিত মুখ।
ক্লায়েন্ট-ফ্রিল্যান্স-মার্কেটপ্লেস এসব খটমটে শব্দের ভীড়ে একটু কি খেই হারাচ্ছেন? মনে কি হচ্ছে, “সবই বুঝলাম। কিন্তু কি নিয়ে ফ্রিল্যান্সিং করবো?”
সবকিছুরই উত্তর পাবেন এখানে। ফ্রিল্যান্সিং মার্কেটপ্লেসে নানা রকম কাজ করা সম্ভব। এই কাজগুলোকে মোটামুটি দুই ভাগে ভাগ করা যায়।
বিষয় যা-ই হোক না কেন, একটা ব্যাপার সবসময় মাথায় রাখতে হবে। কাজটা কত কঠিন আর সেটি করতে কি সময় আপনি পাচ্ছেন- এর মধ্যে একটা ভারসাম্য বজায় রাখতে হবে। পারিশ্রমিকের ব্যাপারটা আপনার অভিজ্ঞতার ওপর অনেকটা নির্ভর করবে।
ইন্টারনেট কিন্তু খুব নিরাপদ কোন জায়গা নয়। তাই ফ্রিল্যান্সিং করে যদি পারিশ্রমিক পাওয়ার প্রক্রিয়াটা না জানা থাকে, তাহলে খুব সহজেই আপনি বোকা বনে যেতে পারেন। আপনার পরিশ্রম হয়ে যেতে পারে স্রেফ বেগার খাটা। সেজন্যে পারিশ্রমিক পাবার উপায়গুলো পরিষ্কার করে দেয়া দরকার।
ফ্রিল্যান্সিং যেমন প্রচুর সম্ভাবনার দ্বার খুলে দিয়েছে, তেমনি অনলাইন ফ্রিল্যান্সিং করতে হলে বেশ কিছু বাধার সম্মুখীন হতে হয়। এর কোন বাধাধরা সময় নেই, যেকোন সময় কাজ আসতে পারে, আবার নাও আসতে পারে। তাই এমনও হতে পারে যে, কোন মাসে বিশাল অংকের পারিশ্রমিক পেলেও, পরের মাসেই সে পারিশ্রমিকের পরিমাণ একেবারে কমে গেল। অনেকসময় ক্লায়েন্ট পারিশ্রমিক দিতে দেরি করে, নানা সমস্যা করে। আবার, আউটসোর্সিং ব্যাপারটা আমাদের দেশে স্বীকৃত না পেশা হিসেবে। তবে আশার কথা হলো, এখন দৃষ্টিভঙ্গিটা একটু হলেও পাল্টাচ্ছে।
ভেতো বাঙ্গালি এবার ফ্রিল্যান্সার হবে, বিশ্ব চিনবে এক স্বাবলম্বী বাংলাদেশ
বাঙ্গালি ফ্রিল্যান্সাররা সাধারণত ডাটা এন্ট্রি, লেখালেখি, ওয়েব ডিজাইনিং, মাল্টিমিডিয়া আর কন্টেন্ট বানানোর কাজ করে থাকেন। এগুলো অবশ্যই প্রশংসার দাবিদার, কিন্তু সবচেয়ে লাভজনক কাজ হলো ওয়েব ডেভেলপিং আর সফটওয়্যার ডেভেলপিং। এই জায়গাটাতে বাংলাদেশ এখনো একটু হলেও পিছিয়ে আছে। এজন্যে বাংলাদেশী ফ্রিল্যান্সারদের দক্ষতা বাড়াতে হবে, কারণ:
বাঙ্গালির অনেক দুর্নাম। তারা আলসে, কর্পোরেট দুনিয়ার পাংকচুয়াল লোকেদের সাথে তাল মেলাতে তারা বিষম খায়, নিয়মের বেড়াজালে তারা হাঁসফাঁস করে। কিন্তু মেধার দিক থেকে তাদের কমতি কখনোই ছিলো না। আর এজন্যেই ফ্রিল্যান্সিং আলসে বাঙ্গালিদের এনে দিয়েছে দারুণ এক সুযোগ- নিয়মের মাঝে বাধা না পড়ে, নিজের মেধাকে নিজের মতো করে কাজে লাগিয়ে অর্থোপার্জন করা।
দরকার নেই বাধাধরা নটা-পাচটা চাকুরি, দরকার নেই কর্পোরেট রোবট হবার! নিজের মেধাকে কাজে লাগিয়ে আউটসোর্সিং করেই কিন্তু সুন্দর একটা ভবিষ্যত পাওয়া সম্ভব! ভেতো বাঙ্গালি এবার ফ্রিল্যান্সার হবে, বিশ্ব চিনবে এক স্বাবলম্বী বাংলাদেশ- এ স্বপ্ন আর বেশিদিন থাকবে না স্বপ্ন হয়ে! স্বপ্নকে বাস্তবে আনার এখনই তো সময়!
SkillCare.Net was launched with the purpose of helping you to learn valuable skills that will help you make the most out of your work environment and keep you updated with the most recent developments in the tech world. Each online course we reviewed by our Team with special attention given to the quality of the content.